9:59 pm, Sunday, 20 April 2025

নেত্রকোনা জেলায় টাকা বিনিময়ে দত্তক, দেওয়া শিশুকে ফিরিয়ে আনতে (৪৭) দিন পর থানায় অভিযোগ

  • Reporter Name
  • Update Time : 03:44:18 am, Friday, 8 November 2024
  • 118 Time View

নেত্রকোনা জেলায় টাকা বিনিময়ে দত্তক, দেওয়া শিশুকে ফিরিয়ে আনতে (৪৭) দিন পর থানায় অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক এইচ আর হাবিব

নেত্রকোনা জেলার দূর্গাপুর উপজেলা পরিষদের কাকৈড় ইউনিয়নের কেট্টা গ্রামের এঘটনায় সৃষ্টি হয়েছিল সাত মাস বয়সের শিশু সন্তানকে দত্তক দিয়েছেন বাবা-মা অসহায় হয়ে। মাত্র ৪০ হাজার টাকার বিনিময়ে। কিন্তু এক মাস ৭-দিন পরহতেই সেই সন্তানকেই পুণরায় নিজের কূলে ফিরে পেতে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন অসহায় সেই দম্পতি। অভিযোগ পেয়ে দূর্গাপুর থানা পুলিশের চৌকস একটি দল দত্তক নেয়া শিশুটিকে উদ্ধার করে,ছোট শিশুটিকে তার গর্ভধারিণীর মায়ের কোলে।
এ ঘটনাটি ঘটেছে নেত্রকোনা জেলা দুর্গাপুর উপজেলায় কাকৈড় ইউনিয়নের কেট্টা গ্রামের রাকিবুল হাসান রাব্বি ও মুসলিমা আক্তারের চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে জন্ম নেওয়া ছেলে সন্তান কে ।দত্তক দেওয়া দম্পতির দাবী সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করেছেন তারা টাকার বিষয়েও জানতেন না,তাদের ব্যাগের ভেতর সামান্য উপহার দেওয়ার কথা বলে টাকা ঢুকিয়েদিয়েছিল ষড়যন্ত্র করে।
জানা গেছে,দুর্গাপুর উপজেলার কাকৈরগড়া ইউনিয়নের কেট্টা গ্রামের রকিবুল হাসান রাব্বি ও মুসলিমা আক্তার দম্পতির এক পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। কিন্তু অভাবের তাঁড়নায় সেই সন্তানকে লালন পালন করতে না পেরে নিরুপায় হয়ে সেই শিশু সন্তান কে দত্তক দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তারা। পরবর্তীতে একই উপজেলার গাঁওকান্দিয়া ইউনিয়নের জকিরপাড় গ্রামের মোঃ আমিনুল ইসলাম ও মালেকা খাতুন নিঃসন্তান দম্পতিদের কাছে আসে চলতি বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর মাসে এক স্ট্যাম্পের মাধ্যমে চল্লিশ হাজার টাকার বিনিময়ে শিশুটিকে দত্তক নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিসন্তান ঐ দম্পতি। কিন্তু ১ মাস ৭ দিন পার হতেই গতকাল বুধবার (০৬ নভেম্বর) দূর্গাপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন রকিবুল হাসান রাব্বি ও মুসলিমা আক্তার দম্পতি। অভিযোগ বৃত্তিতে দূর্গাপুর থানা পুলিশ শিশুটিকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে ৩:১৫ মিনিটে সময় (০৭ নভেম্বর) বিকাল সাড়ে ১৬ দুই পক্ষের উপস্থিতি ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত হয়ে আলোচনার মধ্যে দিয়ে দত্তক দেওয়া প্রথম বাবা-মায়ের কাছেই শিশুটিকে ফেরত দিয়েছে পুলিশ কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ বাচ্ছু মিয়া।
নিজের বাচ্চাকে ফেরত পেয়ে রকিবুল হাসান রাব্বি ও মুসলিমা খাতুন বলেন,ভুল করেছিলাম, এখন আমাদের বাচ্চাকে বুকে পাইছি। তবে উপহার দেওয়ার কথা বলে ৪০ হাজার না,৩৫ হাজার টাকা ব্যাগে ডুকিয়ে দিছিলো,তা অবশ্যই ফেরত চাইলে তো দিতেই হবে।
দত্তক নেওয়া নিঃসন্তান আমিনুল ইসলাম দৈনিক চেতনায় মুক্তিযোদ্ধা পত্রিকার মফস্বল সম্পাদক কে বলেন,১৪ বছর ধরে আমার বাচ্চা হয়নি তাই এই শিশু বাচ্চাকে দত্তক নিছিলাম এবং তাদের ৪০ হাজার টাকা দিয়েছিলাম কিন্তু গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে পর পরেই পুলিশ গিয়ে বাচ্চাসহ আমাকে দূর্গাপুর থানায় নিয়ে আসে এবং বাচ্চা জন্মদাতা পিতার কোলে ছেলে সন্তান কে দিয়েদিতে বলেছেন উপস্থিত এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও ওসি সাহেব। কিন্তু গতকাল বৃহস্পতিবার আমার টাকাও ফেরত দেয়নি,বাচ্চাও নিয়ে গেছেন। এদুদিনে নিসন্তানী আমার স্ত্রী শিশুর মায়ায় এখন স্বয্যাশায়ী হয়ে যাচ্ছে তাকেই বাঁচানো কঠিন হবে এখন আমার পক্ষে।
নিঃসন্তান দম্পতির স্বজন আব্দুল আজিজ বলেন,পুলিশ বাচ্চাকে তার গর্ভধারিণীর মায়ের কাছে দিতে বলেছে আমরা দুধের শিশু কে তার বাবার কাছে দিয়ে দিয়েছি। কিন্তু দুঃখের বিষয় আমাদের কাছ থেকে নেওয়া টাকা তারা এখনো আমাকে ফেরত দেয়নি। তিনি আরও বলেন,ভাতিজা আমিনুল ইসলাম ও স্ত্রীর মালেকা খাতুনর বিয়ের পর একটি বাচ্চা হয় কিন্তু আড়াই বছর বয়সে পানিতে ডুবে মারা যায়। পরবর্তীতে সময়ে আর বাচ্চা হয়নি প্রায় ১৪ বছর হয়েছে। এমন অবস্থায় মালেকা বাচ্চার জন্য কান্নাকাটি করে। অবশেষে একটা বাচ্চা লালান পালন করতে অপারগতা অক্ষমতা প্রকাশ করে পালক (দত্তক) দিতে খোঁজ পাওয়া গেলে পরে চারজনে সাক্ষী ও জন্মদাতা বাচ্চার বাবা-মায়ের কিছু শর্তে স্ট্যাম্পের কয়েক জন স্বাক্ষীর মোকাবেলায় স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী বাচ্চা নিয়ে আসি।
এ ব্যাপারে দুর্গাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ বাচ্চু মিয়া বলেন,বাবা-মা ৪০ হাজার টাকার বিনিময়ে তাদের বাচ্চাকে একজনকে দত্তক দিয়েছিল কিন্তু এখন বাচ্চা ছাড়া শিশুর গর্ভধারিণীর অসহায় অভাগিনী মা থাকতে পারেনা ,আবার যারা দুধের শিশু কে দত্তক নিয়েছে, তাদেরকে, বাচ্চাকে দেখতে দেয়না, এবং দেখতে না পেরে বিভিন্ন জায়গায় রাখতো পরে গতকাল রাতে কান্নাকাটি করে থানায় এসে অভিযোগ দায়ের করে পরে পুলিশ পাঠিয়ে বাচ্চাকে উদ্ধার করে থানায় আনা হয়। গতকাল উভয়পক্ষকে নিয়ে বসেছিলাম ও স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিদের সামনেই আসল বাবা-মায়ের কাছে বাচ্চাটিকে ফিরত দেওয়া হয়েছে। টাকার বিষয়ে জানতে চাইলেও রাকিবুল হাসান রাব্বি চাচা বলেন,ওরা একে অপরের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের আত্মীয় হয়।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Popular Post

ফ্রিজ ধরে খোলার সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে হয়ে দুইবোনের-মৃত্যু

নেত্রকোনা জেলায় টাকা বিনিময়ে দত্তক, দেওয়া শিশুকে ফিরিয়ে আনতে (৪৭) দিন পর থানায় অভিযোগ

Update Time : 03:44:18 am, Friday, 8 November 2024

নেত্রকোনা জেলায় টাকা বিনিময়ে দত্তক, দেওয়া শিশুকে ফিরিয়ে আনতে (৪৭) দিন পর থানায় অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক এইচ আর হাবিব

নেত্রকোনা জেলার দূর্গাপুর উপজেলা পরিষদের কাকৈড় ইউনিয়নের কেট্টা গ্রামের এঘটনায় সৃষ্টি হয়েছিল সাত মাস বয়সের শিশু সন্তানকে দত্তক দিয়েছেন বাবা-মা অসহায় হয়ে। মাত্র ৪০ হাজার টাকার বিনিময়ে। কিন্তু এক মাস ৭-দিন পরহতেই সেই সন্তানকেই পুণরায় নিজের কূলে ফিরে পেতে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন অসহায় সেই দম্পতি। অভিযোগ পেয়ে দূর্গাপুর থানা পুলিশের চৌকস একটি দল দত্তক নেয়া শিশুটিকে উদ্ধার করে,ছোট শিশুটিকে তার গর্ভধারিণীর মায়ের কোলে।
এ ঘটনাটি ঘটেছে নেত্রকোনা জেলা দুর্গাপুর উপজেলায় কাকৈড় ইউনিয়নের কেট্টা গ্রামের রাকিবুল হাসান রাব্বি ও মুসলিমা আক্তারের চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে জন্ম নেওয়া ছেলে সন্তান কে ।দত্তক দেওয়া দম্পতির দাবী সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করেছেন তারা টাকার বিষয়েও জানতেন না,তাদের ব্যাগের ভেতর সামান্য উপহার দেওয়ার কথা বলে টাকা ঢুকিয়েদিয়েছিল ষড়যন্ত্র করে।
জানা গেছে,দুর্গাপুর উপজেলার কাকৈরগড়া ইউনিয়নের কেট্টা গ্রামের রকিবুল হাসান রাব্বি ও মুসলিমা আক্তার দম্পতির এক পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। কিন্তু অভাবের তাঁড়নায় সেই সন্তানকে লালন পালন করতে না পেরে নিরুপায় হয়ে সেই শিশু সন্তান কে দত্তক দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তারা। পরবর্তীতে একই উপজেলার গাঁওকান্দিয়া ইউনিয়নের জকিরপাড় গ্রামের মোঃ আমিনুল ইসলাম ও মালেকা খাতুন নিঃসন্তান দম্পতিদের কাছে আসে চলতি বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর মাসে এক স্ট্যাম্পের মাধ্যমে চল্লিশ হাজার টাকার বিনিময়ে শিশুটিকে দত্তক নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিসন্তান ঐ দম্পতি। কিন্তু ১ মাস ৭ দিন পার হতেই গতকাল বুধবার (০৬ নভেম্বর) দূর্গাপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন রকিবুল হাসান রাব্বি ও মুসলিমা আক্তার দম্পতি। অভিযোগ বৃত্তিতে দূর্গাপুর থানা পুলিশ শিশুটিকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে ৩:১৫ মিনিটে সময় (০৭ নভেম্বর) বিকাল সাড়ে ১৬ দুই পক্ষের উপস্থিতি ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত হয়ে আলোচনার মধ্যে দিয়ে দত্তক দেওয়া প্রথম বাবা-মায়ের কাছেই শিশুটিকে ফেরত দিয়েছে পুলিশ কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ বাচ্ছু মিয়া।
নিজের বাচ্চাকে ফেরত পেয়ে রকিবুল হাসান রাব্বি ও মুসলিমা খাতুন বলেন,ভুল করেছিলাম, এখন আমাদের বাচ্চাকে বুকে পাইছি। তবে উপহার দেওয়ার কথা বলে ৪০ হাজার না,৩৫ হাজার টাকা ব্যাগে ডুকিয়ে দিছিলো,তা অবশ্যই ফেরত চাইলে তো দিতেই হবে।
দত্তক নেওয়া নিঃসন্তান আমিনুল ইসলাম দৈনিক চেতনায় মুক্তিযোদ্ধা পত্রিকার মফস্বল সম্পাদক কে বলেন,১৪ বছর ধরে আমার বাচ্চা হয়নি তাই এই শিশু বাচ্চাকে দত্তক নিছিলাম এবং তাদের ৪০ হাজার টাকা দিয়েছিলাম কিন্তু গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে পর পরেই পুলিশ গিয়ে বাচ্চাসহ আমাকে দূর্গাপুর থানায় নিয়ে আসে এবং বাচ্চা জন্মদাতা পিতার কোলে ছেলে সন্তান কে দিয়েদিতে বলেছেন উপস্থিত এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও ওসি সাহেব। কিন্তু গতকাল বৃহস্পতিবার আমার টাকাও ফেরত দেয়নি,বাচ্চাও নিয়ে গেছেন। এদুদিনে নিসন্তানী আমার স্ত্রী শিশুর মায়ায় এখন স্বয্যাশায়ী হয়ে যাচ্ছে তাকেই বাঁচানো কঠিন হবে এখন আমার পক্ষে।
নিঃসন্তান দম্পতির স্বজন আব্দুল আজিজ বলেন,পুলিশ বাচ্চাকে তার গর্ভধারিণীর মায়ের কাছে দিতে বলেছে আমরা দুধের শিশু কে তার বাবার কাছে দিয়ে দিয়েছি। কিন্তু দুঃখের বিষয় আমাদের কাছ থেকে নেওয়া টাকা তারা এখনো আমাকে ফেরত দেয়নি। তিনি আরও বলেন,ভাতিজা আমিনুল ইসলাম ও স্ত্রীর মালেকা খাতুনর বিয়ের পর একটি বাচ্চা হয় কিন্তু আড়াই বছর বয়সে পানিতে ডুবে মারা যায়। পরবর্তীতে সময়ে আর বাচ্চা হয়নি প্রায় ১৪ বছর হয়েছে। এমন অবস্থায় মালেকা বাচ্চার জন্য কান্নাকাটি করে। অবশেষে একটা বাচ্চা লালান পালন করতে অপারগতা অক্ষমতা প্রকাশ করে পালক (দত্তক) দিতে খোঁজ পাওয়া গেলে পরে চারজনে সাক্ষী ও জন্মদাতা বাচ্চার বাবা-মায়ের কিছু শর্তে স্ট্যাম্পের কয়েক জন স্বাক্ষীর মোকাবেলায় স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী বাচ্চা নিয়ে আসি।
এ ব্যাপারে দুর্গাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ বাচ্চু মিয়া বলেন,বাবা-মা ৪০ হাজার টাকার বিনিময়ে তাদের বাচ্চাকে একজনকে দত্তক দিয়েছিল কিন্তু এখন বাচ্চা ছাড়া শিশুর গর্ভধারিণীর অসহায় অভাগিনী মা থাকতে পারেনা ,আবার যারা দুধের শিশু কে দত্তক নিয়েছে, তাদেরকে, বাচ্চাকে দেখতে দেয়না, এবং দেখতে না পেরে বিভিন্ন জায়গায় রাখতো পরে গতকাল রাতে কান্নাকাটি করে থানায় এসে অভিযোগ দায়ের করে পরে পুলিশ পাঠিয়ে বাচ্চাকে উদ্ধার করে থানায় আনা হয়। গতকাল উভয়পক্ষকে নিয়ে বসেছিলাম ও স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিদের সামনেই আসল বাবা-মায়ের কাছে বাচ্চাটিকে ফিরত দেওয়া হয়েছে। টাকার বিষয়ে জানতে চাইলেও রাকিবুল হাসান রাব্বি চাচা বলেন,ওরা একে অপরের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের আত্মীয় হয়।