6:19 pm, Sunday, 27 April 2025

সিংড়ায় সুস্বাদু রস দিয়ে গুড় তৈরি করতে ব্যাস্ত কারিগরগণ

  • Reporter Name
  • Update Time : 06:10:17 pm, Wednesday, 18 December 2024
  • 89 Time View

সিংড়ায় সুস্বাদু রস দিয়ে গুড় তৈরি করতে ব্যাস্ত কারিগরগণ

কাবিল উদ্দিন কাফি, সিংড়া নাটোর জেলা প্রতিনিধি

নাটোর-বগুড়া মহাসড়কের  শেরকোল বাজার থেকে ১ কিঃ  পুর্বে ধুলাউড়ি গ্রাম।  এ গ্রামের একটি একচালা  টিনের বাড়িতে তৈরী হচ্ছে শীতকালের সুস্বাদু খেজুর গুড়। টাটকা খেজুর রস জাল করে পাটালি, ঝোলা, লালি সহ তৈরী করছেন নানা রকম মজাদার গুড়।  ধুলাউড়ি গ্রামের এই এক চালা টিনের বাড়িটি ভাড়া নিয়েছেন রাজশাহীর বাঘা এলাকা থেকে আগত ৫ থেকে ৭ জনের  একদল গুড় তৈরীর কারিগর। গত তিন বছর ধরে প্রতি শীত মৌসুমে  এ বাড়িতেই গুড় তৈরী করছেন এই কারিগররা। এ কারনে এ বাড়িটি এখন স্থানীয়দের কাছে গুড় তৈরীর কারখানা নামে পরিচিত হয়ে উঠেছে।
সরেজমিনে ধুলাউড়ি গ্রামের ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, রস জাল দিয়ে গুড় তৈরীতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা। এসময় কথা হয়  সিদ্দিক ও আলতাফ নামের দুই কারিগরের সাথে। তারা জানান, গত কার্তিক মাসে তারা এখানে এসেছেন। থাকবেন ফাল্গুন মাস পর্যন্ত। দুই কেজি থেকে তিন কেজি গুড় দেওয়ার শর্তে তারা মালিকের গাছ থেকে খেজুর গাছ বর্গা নিয়েছেন। এ বছর তাদের গাছের সংখ্যা প্রায় ২৭০ টি। এখানে তারা প্রতিদিন গুড় উৎপাদন করছেন ৬০ থেকে ৭০ কেজি। শীত আর রোদ দুটোই খেজুর রসের জন্য অনুকুল আবহাওয়া। আবহাওয়া অনুকূল থাকলে গুড়ের উৎপাদন বাড়ে।
কারিগররা  জানান, পাটালি, ঝোলা ও পাতলা বা লালি গুড় ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা পাইকারী কেজি দরে বিক্রি করছেন। পাইকাররা বেশির ভাগ কারখানা থেকেই গুড় কিনে নিয়ে যান। পাইকারদের পাশাপাশি খুচরাও বিক্রি হয় এখান থেকে। তবে খুচরা ও পাইকারি একই দামে বিক্রি করেন তারা।
কারিগররা আরো জানান, প্রতিদিন রাত সাড়ে ৩ টায় গাছ থেকে রসের হাড়ি নামানো শুরু হয়। এর পর সকাল থেকে টানা চার, পাঁচ ঘন্টা জাল দিতে হয়। এভাবে দুপুর ১২ টা থেকে ১ টার মধ্যে শুরু হয় পাটালি তৈরীর কাজ। বিকালে আবারও  ব্যস্ত থাকতে হয় গাছে চাচ দেওয়া ও হাড়ি লাগানোর কাজে। সব মিলে হাড় ভাঙা পরিশ্রম করতে হয় তাদের। পাঁচ মাসে  ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা আয় হয় প্রত্যেক কারিগরের। এলাকায় বিভিন্ন পেশার কাজ করলেও শীতের এই পাঁচ মাস এলাকার বাহিরে এসে গুড় তৈরীর কাজ করে বাড়তি আয় করেন এই কারিগররা।
ধুলাউড়ি গ্রামের কৃষক মখলেছুর জানান, আমরা আগে খেজুর গাছের তেমন যতœ বুঝিনি। অযতœ অবহেলায়  গাছ গুলো পড়েই থাকতো। আমার পুকুর পাড়ের ১০ টি গাছ ওদের কাছে বর্গা দিয়েছি। বিনা পরিশ্রমে ১০টি গাছ থেকে ৩০ কেজি গুড় পাবো।  তাতে আমার সারা বছর গুড়ের চাহিদা পুরণ হবে।
সিংড়া বাজারে গুড় ব্যবসায়ি আনিছুর, নরেন ও মাসুদ আলী জানান, শীত মৌসুমে ধুলাউড়ি, পাটকোল, তেমুখ নওগাঁ সহ উপজেলার বিভিন্ন কারখানা থেকে খেজুর গুড় কিনে তারা বাজারে বিক্রি করছেন। গ্রামের এসব কারখানার গুড় টাটকা ও সুস্বাদু বলে বাজারে অন্য গুড়ের চেয়ে   এসব গুড়ের  চাহিদা বেশি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ খন্দকার ফরিদ জানান, সিংড়া উপজেলায় এবছর ৫৮ হাজার খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা র্নিধারণ করা হয়েছে। সাধারণত কৃষকরা পারিবারিকভাবেই শীতকালে  এসব গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে গুড় তৈরী করেন। পাশাপাশি বিগত কয়েক বছর ধরে রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া সহ বিভিন্ন জেলা থেকে গাছীরা আসছেন। তারা টিম ওয়ার্ক করে গাছ বর্গা নিয়ে রস সংগ্রহ করে গুড় তৈরী করছেন। আমরা স্বাস্থ্য সম্মত গুড় তৈরীর  জন্য ওই সব পারিবারিক কারখানা গুলোতে মনিটরিং করছি। খেজুর গাছ কৃষকদের বাড়তি আয়ের একটি উৎস। এগাছ থেকে শুধু গুড়ই পাওয়া যায় তা নয়। এগাছের পাতা শুকিয়ে নকশাদার পাটি, হাত ব্যাগ  সহ নানা রকম  কারুপণ্য তৈরী করা হয়। প্রতিটি বাড়িতে যাতে অন্তত একটি করে খেজুর গাছ থাকে সে জন্য কৃষকদের  মাঝে প্রচারণা চালানো হচ্ছে।

১৮.১২.২৪

 

 

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Popular Post

দায়িত্বের ছায়ায় হারিয়ে যাওয়া নীরব যোদ্ধাই পুরুষ ———— জাহেদুল ইসলাম আল রাইয়ান

সিংড়ায় সুস্বাদু রস দিয়ে গুড় তৈরি করতে ব্যাস্ত কারিগরগণ

Update Time : 06:10:17 pm, Wednesday, 18 December 2024

সিংড়ায় সুস্বাদু রস দিয়ে গুড় তৈরি করতে ব্যাস্ত কারিগরগণ

কাবিল উদ্দিন কাফি, সিংড়া নাটোর জেলা প্রতিনিধি

নাটোর-বগুড়া মহাসড়কের  শেরকোল বাজার থেকে ১ কিঃ  পুর্বে ধুলাউড়ি গ্রাম।  এ গ্রামের একটি একচালা  টিনের বাড়িতে তৈরী হচ্ছে শীতকালের সুস্বাদু খেজুর গুড়। টাটকা খেজুর রস জাল করে পাটালি, ঝোলা, লালি সহ তৈরী করছেন নানা রকম মজাদার গুড়।  ধুলাউড়ি গ্রামের এই এক চালা টিনের বাড়িটি ভাড়া নিয়েছেন রাজশাহীর বাঘা এলাকা থেকে আগত ৫ থেকে ৭ জনের  একদল গুড় তৈরীর কারিগর। গত তিন বছর ধরে প্রতি শীত মৌসুমে  এ বাড়িতেই গুড় তৈরী করছেন এই কারিগররা। এ কারনে এ বাড়িটি এখন স্থানীয়দের কাছে গুড় তৈরীর কারখানা নামে পরিচিত হয়ে উঠেছে।
সরেজমিনে ধুলাউড়ি গ্রামের ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, রস জাল দিয়ে গুড় তৈরীতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা। এসময় কথা হয়  সিদ্দিক ও আলতাফ নামের দুই কারিগরের সাথে। তারা জানান, গত কার্তিক মাসে তারা এখানে এসেছেন। থাকবেন ফাল্গুন মাস পর্যন্ত। দুই কেজি থেকে তিন কেজি গুড় দেওয়ার শর্তে তারা মালিকের গাছ থেকে খেজুর গাছ বর্গা নিয়েছেন। এ বছর তাদের গাছের সংখ্যা প্রায় ২৭০ টি। এখানে তারা প্রতিদিন গুড় উৎপাদন করছেন ৬০ থেকে ৭০ কেজি। শীত আর রোদ দুটোই খেজুর রসের জন্য অনুকুল আবহাওয়া। আবহাওয়া অনুকূল থাকলে গুড়ের উৎপাদন বাড়ে।
কারিগররা  জানান, পাটালি, ঝোলা ও পাতলা বা লালি গুড় ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা পাইকারী কেজি দরে বিক্রি করছেন। পাইকাররা বেশির ভাগ কারখানা থেকেই গুড় কিনে নিয়ে যান। পাইকারদের পাশাপাশি খুচরাও বিক্রি হয় এখান থেকে। তবে খুচরা ও পাইকারি একই দামে বিক্রি করেন তারা।
কারিগররা আরো জানান, প্রতিদিন রাত সাড়ে ৩ টায় গাছ থেকে রসের হাড়ি নামানো শুরু হয়। এর পর সকাল থেকে টানা চার, পাঁচ ঘন্টা জাল দিতে হয়। এভাবে দুপুর ১২ টা থেকে ১ টার মধ্যে শুরু হয় পাটালি তৈরীর কাজ। বিকালে আবারও  ব্যস্ত থাকতে হয় গাছে চাচ দেওয়া ও হাড়ি লাগানোর কাজে। সব মিলে হাড় ভাঙা পরিশ্রম করতে হয় তাদের। পাঁচ মাসে  ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা আয় হয় প্রত্যেক কারিগরের। এলাকায় বিভিন্ন পেশার কাজ করলেও শীতের এই পাঁচ মাস এলাকার বাহিরে এসে গুড় তৈরীর কাজ করে বাড়তি আয় করেন এই কারিগররা।
ধুলাউড়ি গ্রামের কৃষক মখলেছুর জানান, আমরা আগে খেজুর গাছের তেমন যতœ বুঝিনি। অযতœ অবহেলায়  গাছ গুলো পড়েই থাকতো। আমার পুকুর পাড়ের ১০ টি গাছ ওদের কাছে বর্গা দিয়েছি। বিনা পরিশ্রমে ১০টি গাছ থেকে ৩০ কেজি গুড় পাবো।  তাতে আমার সারা বছর গুড়ের চাহিদা পুরণ হবে।
সিংড়া বাজারে গুড় ব্যবসায়ি আনিছুর, নরেন ও মাসুদ আলী জানান, শীত মৌসুমে ধুলাউড়ি, পাটকোল, তেমুখ নওগাঁ সহ উপজেলার বিভিন্ন কারখানা থেকে খেজুর গুড় কিনে তারা বাজারে বিক্রি করছেন। গ্রামের এসব কারখানার গুড় টাটকা ও সুস্বাদু বলে বাজারে অন্য গুড়ের চেয়ে   এসব গুড়ের  চাহিদা বেশি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ খন্দকার ফরিদ জানান, সিংড়া উপজেলায় এবছর ৫৮ হাজার খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা র্নিধারণ করা হয়েছে। সাধারণত কৃষকরা পারিবারিকভাবেই শীতকালে  এসব গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে গুড় তৈরী করেন। পাশাপাশি বিগত কয়েক বছর ধরে রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া সহ বিভিন্ন জেলা থেকে গাছীরা আসছেন। তারা টিম ওয়ার্ক করে গাছ বর্গা নিয়ে রস সংগ্রহ করে গুড় তৈরী করছেন। আমরা স্বাস্থ্য সম্মত গুড় তৈরীর  জন্য ওই সব পারিবারিক কারখানা গুলোতে মনিটরিং করছি। খেজুর গাছ কৃষকদের বাড়তি আয়ের একটি উৎস। এগাছ থেকে শুধু গুড়ই পাওয়া যায় তা নয়। এগাছের পাতা শুকিয়ে নকশাদার পাটি, হাত ব্যাগ  সহ নানা রকম  কারুপণ্য তৈরী করা হয়। প্রতিটি বাড়িতে যাতে অন্তত একটি করে খেজুর গাছ থাকে সে জন্য কৃষকদের  মাঝে প্রচারণা চালানো হচ্ছে।

১৮.১২.২৪