1:46 am, Monday, 28 April 2025

ইসরা ও মেরাজ: বিস্ময়কর মহিমান্বিত এক ঐশী ভ্রমণ

  • Reporter Name
  • Update Time : 06:08:25 pm, Monday, 27 January 2025
  • 47 Time View

ইসরা ও মেরাজ: বিস্ময়কর মহিমান্বিত এক ঐশী ভ্রমণ

ইসরা ও মেরাজ ইসলামের ইতিহাসে এক অভূতপূর্ব এবং অতীন্দ্রিয় মহিমার অধ্যায়, যা আধ্যাত্মিকতার শীর্ষচূড়া স্পর্শ করে। এ ঘটনা মানবতার সামনে আল্লাহর অসীম কুদরত এবং তাঁর প্রিয় নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মর্যাদার অনুপম স্বাক্ষর। ইসরা ও মেরাজ আমাদের শেখায়, দুনিয়ার সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করে কীভাবে আধ্যাত্মিক জগতে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ করা যায়। এটি এমন এক ঐশী যাত্রা, যা মানুষকে প্রেরণা দেয় নিজের আত্মাকে শুদ্ধ করে আল্লাহর পথে অগ্রসর হতে।  
এই মহান ঘটনা শুধু নবীজীর জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় নয়; বরং সমগ্র মানবজাতির জন্য এটি এক চিরন্তন শিক্ষার দিগন্ত উন্মোচন করে। মেরাজে প্রদত্ত সালাতের বিধান প্রমাণ করে যে, বান্দার প্রকৃত মর্যাদা নির্ধারিত হয় আল্লাহর সঙ্গে তার সম্পর্কের গভীরতায়। জান্নাত ও জাহান্নামের দৃশ্যাবলী, নবীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ, এবং আল্লাহর সান্নিধ্যে পৌঁছার অভিজ্ঞতা আমাদের মনে করিয়ে দেয় পাপ-পুণ্যের পরিণতি, আখিরাতের বাস্তবতা, এবং আল্লাহর নির্দেশ পালন করার অপরিহার্যতা।  
ইসরা ও মেরাজ কেবল এক রাতের অলৌকিক ঘটনা নয়; এটি বিশ্বাসের মর্ম, আল্লাহর প্রতি অগাধ আস্থা, এবং আত্মশুদ্ধির এক উজ্জ্বল আলোকবর্তিকা। এই ঘটনা আমাদের প্রতিদিনের জীবনে নৈতিকতা ও আল্লাহমুখী দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলতে প্রেরণা জোগায়।  

ইসরা ও মেরাজ: এক ঐশী ভ্রমণের পরিচয়:-
ইসরা অর্থ “রাত্রিকালীন ভ্রমণ” এবং মেরাজ অর্থ “উচ্চে আরোহণ”। এই মহাযাত্রার প্রথম অংশে রাসূল (সা.) মক্কার মসজিদুল হারাম থেকে বাইতুল মুকাদ্দাসের মসজিদুল আকসা পর্যন্ত ভ্রমণ করেন। এ অংশটিকে ইসরা বলা হয়। এরপর আকাশের সপ্তস্তর অতিক্রম করে মহান আল্লাহর সান্নিধ্যে পৌঁছান, যা মেরাজ নামে পরিচিত।  

কুরআনের ভাষায়:  
“মহান সে সত্তা, যিনি তাঁর বান্দাকে রাত্রির কিছু অংশে মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত ভ্রমণ করিয়েছেন, যার পরিবেশ আমি বরকতময় করেছি, যেন আমি তাকে আমার নিদর্শনগুলো দেখাই। নিশ্চয়ই তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।”
(সূরা আল-ইসরা: ১৭:১)  

ইসরা ও মেরাজের হাদিসভিত্তিক বর্ণনা

ইসরা ও মেরাজের ঘটনা হাদিসে বিস্তারিতভাবে বর্ণিত হয়েছে। রাসূল (সা.) তাঁর এই অতিপ্রাকৃত যাত্রায় জান্নাত থেকে আনা বোরাক নামক এক বিশেষ বাহনে সওয়ার হন, যা বিদ্যুৎগতির থেকেও দ্রুতগামী। মসজিদুল আকসায় পৌঁছে তিনি সকল নবীর ইমাম হিসেবে সালাত আদায় করেন। এরপর আকাশের স্তরগুলো পেরিয়ে তিনি বিভিন্ন নবীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।  
বোরাকের বর্ণনা:-

রাসূল (সা.) বলেন:  

“আমি বোরাকে চড়েছিলাম, যা সাদা রঙের ছিল এবং আকারে গাধা ও খচ্চরের মধ্যবর্তী। এটি এমন দ্রুতগামী ছিল যে, তার দৃষ্টিসীমা পর্যন্ত এক লাফে পৌঁছে যেত।”
(সহীহ বুখারী: ৩২০৭)  

মেরাজ ও সালাতের উপহার মেরাজের সময় আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা রাসূল (সা.)-এর মাধ্যমে উম্মতের জন্য প্রথমে ৫০ ওয়াক্ত সালাত নির্ধারণ করেন। পরে মুসা (আ.)-এর পরামর্শে এটি কমিয়ে পাঁচ ওয়াক্তে আনা হয়। কিন্তু এর প্রতিদান ৫০ ওয়াক্তের সমান রয়ে যায়।  

রাসূল (সা.) বলেন:  
*”পাঁচ ওয়াক্ত সালাত নির্ধারণ করা হয়েছে, কিন্তু এর সাওয়াব পঞ্চাশের সমান হবে।”*  
(সহীহ বুখারী: ৩৪৯)  

জান্নাত ও জাহান্নামের দৃশ্য:-
মেরাজের রাতে রাসূল (সা.) জান্নাত ও জাহান্নামের দৃশ্য প্রত্যক্ষ করেন। জান্নাতে তিনি তার সৌন্দর্য ও শান্তি অবলোকন করেন, আর জাহান্নামে দেখেন পাপীদের শাস্তি।  

(মুসনাদ আহমদ: ২৩৭০৩)  

নবীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ

আকাশের বিভিন্ন স্তরে রাসূল (সা.) আদম (আ.), ঈসা (আ.), মুসা (আ.), ইবরাহিম (আ.) সহ অন্যান্য নবীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।  

“আমি প্রথম আকাশে আদম (আ.), দ্বিতীয় আকাশে ঈসা (আ.) ও ইয়াহইয়া (আ.), তৃতীয় আকাশে ইউসুফ (আ.), ষষ্ঠ আকাশে মুসা (আ.) এবং সপ্তম আকাশে ইবরাহিম (আ.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করি।”

(সহীহ মুসলিম: ১৬২)  

ইসরা ও মেরাজের তাৎপর্য

ইসরা ও মেরাজের ঘটনায় এমন অসংখ্য শিক্ষা রয়েছে, যা মানবজীবনকে আলোকিত ও পথনির্দেশিত করে:  

১/ আধ্যাত্মিক উৎকর্ষতা ও আল্লাহর সান্নিধ্য:  

এই মহাযাত্রা আমাদের শেখায়, আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস ও আত্মসমর্পণের মাধ্যমে একজন বান্দা আধ্যাত্মিক উৎকর্ষতার শিখরে পৌঁছাতে পারে।  

২/ সালাতের গুরুত্ব:  

মেরাজে সালাতের বিধান প্রমাণ করে যে, এটি একজন মুমিনের জীবনের মূল ভিত্তি। সালাত কেবল একটি ইবাদত নয়; বরং এটি বান্দার সঙ্গে আল্লাহর সংযোগ স্থাপনের সর্বোত্তম মাধ্যম।  

৩/ জীবনের পাপ-পুণ্যের পরিণতি:  

জান্নাত ও জাহান্নামের দৃশ্যপট আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, সৎকর্মের ফলাফল জান্নাত এবং পাপাচারের পরিণতি জাহান্নাম।  

৪/নবীদের নেতৃত্বের শিক্ষা:  

   
নবীদের সঙ্গে রাসূল (সা.)-এর সাক্ষাৎ ইসলামের শাশ্বত ঐতিহ্যকে ধারণ করে এবং প্রমাণ করে যে, সকল নবীর বার্তা একই আলোকধারার অন্তর্ভুক্ত।  

সর্বোপরি ইসরা ও মেরাজ কেবল একটি ঐতিহাসিক ঘটনা নয়; এটি এক মহিমান্বিত ঐশী নিদর্শন, যা মানবতার জন্য নৈতিক শিক্ষা, আধ্যাত্মিক গভীরতা এবং জীবনের সঠিক দিকনির্দেশনা বহন করে। এই মহাপবিত্র যাত্রার মাধ্যমে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের শিখিয়েছেন, জীবনের চূড়ান্ত সাফল্য আল্লাহর নির্দেশ মেনে চলায় এবং তাঁর সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক স্থাপনে নিহিত।  

ইসরা ও মেরাজের ঘটনায় আমরা দেখতে পাই, একজন বান্দা তার সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করে কীভাবে অসীম সত্তার সান্নিধ্যে পৌঁছাতে পারে। এটি আমাদের শেখায় যে, জীবনের প্রতিটি প্রতিকূলতার মাঝেও আল্লাহর প্রতি আস্থা রাখা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। মেরাজের শিক্ষা কেবল আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা নয়; এটি জীবনের সব ক্ষেত্রে আমাদের জন্য এক দীপ্ত পথপ্রদর্শক।  

সালাতের বিধান এই ঘটনার সর্বশ্রেষ্ঠ উপহার, যা একজন মুমিনের জন্য আল্লাহর সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের সেতুবন্ধন। এটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, প্রতিদিনের সালাত শুধু একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং আত্মশুদ্ধি ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের এক মোক্ষম মাধ্যম।  
ইসরা ও মেরাজের ঘটনায় নবীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং জান্নাত-জাহান্নামের দৃশ্যপট মানবজাতিকে মনে করিয়ে দেয় সৎকর্মের মর্যাদা এবং পাপাচারের পরিণতি। এই ঘটনায় নিহিত বার্তা আমাদের উৎসাহ দেয় জ্ঞানের প্রতি উদগ্র বাসনা জাগাতে এবং আধ্যাত্মিক উন্নয়নে ব্রতী হতে।  
মহানবী (সা.)-এর এই অভূতপূর্ব যাত্রা আমাদের এক নবজাগরণের বার্তা দেয়—জীবনের প্রতিটি ক্ষণে আল্লাহর প্রতি পূর্ণ সমর্পণ ও তাঁর আদেশ পালনই চূড়ান্ত মুক্তির পথ। ইসরা ও মেরাজের ঘটনায় নিহিত বার্তা চিরন্তন—আমাদের ইবাদত, কর্ম ও চিন্তাধারাকে আল্লাহমুখী করতে হবে। আল্লাহর রহমতের আলোতে আমাদের জীবন আলোকিত হোক এবং আমাদের কর্মে ইসরা ও মেরাজের শিক্ষা প্রতিফলিত হোক। 

✍️মুফতী মুহাম্মাদ আস‌আদ
আরবি প্রভাষক, দারুন নাজাত সিদ্দীকিয়া কামিল মাদ্রাসা,ডেমরা, ঢাকা

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Popular Post

গোপালগঞ্জে আওয়ামী লীগ ছাড়ার ঘোষণা দিয়ে নৌকা ভাস্কর্য ভেঙ্গে ফেললেন চেয়ারম্যান

ইসরা ও মেরাজ: বিস্ময়কর মহিমান্বিত এক ঐশী ভ্রমণ

Update Time : 06:08:25 pm, Monday, 27 January 2025

ইসরা ও মেরাজ: বিস্ময়কর মহিমান্বিত এক ঐশী ভ্রমণ

ইসরা ও মেরাজ ইসলামের ইতিহাসে এক অভূতপূর্ব এবং অতীন্দ্রিয় মহিমার অধ্যায়, যা আধ্যাত্মিকতার শীর্ষচূড়া স্পর্শ করে। এ ঘটনা মানবতার সামনে আল্লাহর অসীম কুদরত এবং তাঁর প্রিয় নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মর্যাদার অনুপম স্বাক্ষর। ইসরা ও মেরাজ আমাদের শেখায়, দুনিয়ার সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করে কীভাবে আধ্যাত্মিক জগতে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ করা যায়। এটি এমন এক ঐশী যাত্রা, যা মানুষকে প্রেরণা দেয় নিজের আত্মাকে শুদ্ধ করে আল্লাহর পথে অগ্রসর হতে।  
এই মহান ঘটনা শুধু নবীজীর জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় নয়; বরং সমগ্র মানবজাতির জন্য এটি এক চিরন্তন শিক্ষার দিগন্ত উন্মোচন করে। মেরাজে প্রদত্ত সালাতের বিধান প্রমাণ করে যে, বান্দার প্রকৃত মর্যাদা নির্ধারিত হয় আল্লাহর সঙ্গে তার সম্পর্কের গভীরতায়। জান্নাত ও জাহান্নামের দৃশ্যাবলী, নবীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ, এবং আল্লাহর সান্নিধ্যে পৌঁছার অভিজ্ঞতা আমাদের মনে করিয়ে দেয় পাপ-পুণ্যের পরিণতি, আখিরাতের বাস্তবতা, এবং আল্লাহর নির্দেশ পালন করার অপরিহার্যতা।  
ইসরা ও মেরাজ কেবল এক রাতের অলৌকিক ঘটনা নয়; এটি বিশ্বাসের মর্ম, আল্লাহর প্রতি অগাধ আস্থা, এবং আত্মশুদ্ধির এক উজ্জ্বল আলোকবর্তিকা। এই ঘটনা আমাদের প্রতিদিনের জীবনে নৈতিকতা ও আল্লাহমুখী দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলতে প্রেরণা জোগায়।  

ইসরা ও মেরাজ: এক ঐশী ভ্রমণের পরিচয়:-
ইসরা অর্থ “রাত্রিকালীন ভ্রমণ” এবং মেরাজ অর্থ “উচ্চে আরোহণ”। এই মহাযাত্রার প্রথম অংশে রাসূল (সা.) মক্কার মসজিদুল হারাম থেকে বাইতুল মুকাদ্দাসের মসজিদুল আকসা পর্যন্ত ভ্রমণ করেন। এ অংশটিকে ইসরা বলা হয়। এরপর আকাশের সপ্তস্তর অতিক্রম করে মহান আল্লাহর সান্নিধ্যে পৌঁছান, যা মেরাজ নামে পরিচিত।  

কুরআনের ভাষায়:  
“মহান সে সত্তা, যিনি তাঁর বান্দাকে রাত্রির কিছু অংশে মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত ভ্রমণ করিয়েছেন, যার পরিবেশ আমি বরকতময় করেছি, যেন আমি তাকে আমার নিদর্শনগুলো দেখাই। নিশ্চয়ই তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।”
(সূরা আল-ইসরা: ১৭:১)  

ইসরা ও মেরাজের হাদিসভিত্তিক বর্ণনা

ইসরা ও মেরাজের ঘটনা হাদিসে বিস্তারিতভাবে বর্ণিত হয়েছে। রাসূল (সা.) তাঁর এই অতিপ্রাকৃত যাত্রায় জান্নাত থেকে আনা বোরাক নামক এক বিশেষ বাহনে সওয়ার হন, যা বিদ্যুৎগতির থেকেও দ্রুতগামী। মসজিদুল আকসায় পৌঁছে তিনি সকল নবীর ইমাম হিসেবে সালাত আদায় করেন। এরপর আকাশের স্তরগুলো পেরিয়ে তিনি বিভিন্ন নবীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।  
বোরাকের বর্ণনা:-

রাসূল (সা.) বলেন:  

“আমি বোরাকে চড়েছিলাম, যা সাদা রঙের ছিল এবং আকারে গাধা ও খচ্চরের মধ্যবর্তী। এটি এমন দ্রুতগামী ছিল যে, তার দৃষ্টিসীমা পর্যন্ত এক লাফে পৌঁছে যেত।”
(সহীহ বুখারী: ৩২০৭)  

মেরাজ ও সালাতের উপহার মেরাজের সময় আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা রাসূল (সা.)-এর মাধ্যমে উম্মতের জন্য প্রথমে ৫০ ওয়াক্ত সালাত নির্ধারণ করেন। পরে মুসা (আ.)-এর পরামর্শে এটি কমিয়ে পাঁচ ওয়াক্তে আনা হয়। কিন্তু এর প্রতিদান ৫০ ওয়াক্তের সমান রয়ে যায়।  

রাসূল (সা.) বলেন:  
*”পাঁচ ওয়াক্ত সালাত নির্ধারণ করা হয়েছে, কিন্তু এর সাওয়াব পঞ্চাশের সমান হবে।”*  
(সহীহ বুখারী: ৩৪৯)  

জান্নাত ও জাহান্নামের দৃশ্য:-
মেরাজের রাতে রাসূল (সা.) জান্নাত ও জাহান্নামের দৃশ্য প্রত্যক্ষ করেন। জান্নাতে তিনি তার সৌন্দর্য ও শান্তি অবলোকন করেন, আর জাহান্নামে দেখেন পাপীদের শাস্তি।  

(মুসনাদ আহমদ: ২৩৭০৩)  

নবীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ

আকাশের বিভিন্ন স্তরে রাসূল (সা.) আদম (আ.), ঈসা (আ.), মুসা (আ.), ইবরাহিম (আ.) সহ অন্যান্য নবীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।  

“আমি প্রথম আকাশে আদম (আ.), দ্বিতীয় আকাশে ঈসা (আ.) ও ইয়াহইয়া (আ.), তৃতীয় আকাশে ইউসুফ (আ.), ষষ্ঠ আকাশে মুসা (আ.) এবং সপ্তম আকাশে ইবরাহিম (আ.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করি।”

(সহীহ মুসলিম: ১৬২)  

ইসরা ও মেরাজের তাৎপর্য

ইসরা ও মেরাজের ঘটনায় এমন অসংখ্য শিক্ষা রয়েছে, যা মানবজীবনকে আলোকিত ও পথনির্দেশিত করে:  

১/ আধ্যাত্মিক উৎকর্ষতা ও আল্লাহর সান্নিধ্য:  

এই মহাযাত্রা আমাদের শেখায়, আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস ও আত্মসমর্পণের মাধ্যমে একজন বান্দা আধ্যাত্মিক উৎকর্ষতার শিখরে পৌঁছাতে পারে।  

২/ সালাতের গুরুত্ব:  

মেরাজে সালাতের বিধান প্রমাণ করে যে, এটি একজন মুমিনের জীবনের মূল ভিত্তি। সালাত কেবল একটি ইবাদত নয়; বরং এটি বান্দার সঙ্গে আল্লাহর সংযোগ স্থাপনের সর্বোত্তম মাধ্যম।  

৩/ জীবনের পাপ-পুণ্যের পরিণতি:  

জান্নাত ও জাহান্নামের দৃশ্যপট আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, সৎকর্মের ফলাফল জান্নাত এবং পাপাচারের পরিণতি জাহান্নাম।  

৪/নবীদের নেতৃত্বের শিক্ষা:  

   
নবীদের সঙ্গে রাসূল (সা.)-এর সাক্ষাৎ ইসলামের শাশ্বত ঐতিহ্যকে ধারণ করে এবং প্রমাণ করে যে, সকল নবীর বার্তা একই আলোকধারার অন্তর্ভুক্ত।  

সর্বোপরি ইসরা ও মেরাজ কেবল একটি ঐতিহাসিক ঘটনা নয়; এটি এক মহিমান্বিত ঐশী নিদর্শন, যা মানবতার জন্য নৈতিক শিক্ষা, আধ্যাত্মিক গভীরতা এবং জীবনের সঠিক দিকনির্দেশনা বহন করে। এই মহাপবিত্র যাত্রার মাধ্যমে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের শিখিয়েছেন, জীবনের চূড়ান্ত সাফল্য আল্লাহর নির্দেশ মেনে চলায় এবং তাঁর সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক স্থাপনে নিহিত।  

ইসরা ও মেরাজের ঘটনায় আমরা দেখতে পাই, একজন বান্দা তার সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করে কীভাবে অসীম সত্তার সান্নিধ্যে পৌঁছাতে পারে। এটি আমাদের শেখায় যে, জীবনের প্রতিটি প্রতিকূলতার মাঝেও আল্লাহর প্রতি আস্থা রাখা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। মেরাজের শিক্ষা কেবল আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা নয়; এটি জীবনের সব ক্ষেত্রে আমাদের জন্য এক দীপ্ত পথপ্রদর্শক।  

সালাতের বিধান এই ঘটনার সর্বশ্রেষ্ঠ উপহার, যা একজন মুমিনের জন্য আল্লাহর সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের সেতুবন্ধন। এটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, প্রতিদিনের সালাত শুধু একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং আত্মশুদ্ধি ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের এক মোক্ষম মাধ্যম।  
ইসরা ও মেরাজের ঘটনায় নবীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং জান্নাত-জাহান্নামের দৃশ্যপট মানবজাতিকে মনে করিয়ে দেয় সৎকর্মের মর্যাদা এবং পাপাচারের পরিণতি। এই ঘটনায় নিহিত বার্তা আমাদের উৎসাহ দেয় জ্ঞানের প্রতি উদগ্র বাসনা জাগাতে এবং আধ্যাত্মিক উন্নয়নে ব্রতী হতে।  
মহানবী (সা.)-এর এই অভূতপূর্ব যাত্রা আমাদের এক নবজাগরণের বার্তা দেয়—জীবনের প্রতিটি ক্ষণে আল্লাহর প্রতি পূর্ণ সমর্পণ ও তাঁর আদেশ পালনই চূড়ান্ত মুক্তির পথ। ইসরা ও মেরাজের ঘটনায় নিহিত বার্তা চিরন্তন—আমাদের ইবাদত, কর্ম ও চিন্তাধারাকে আল্লাহমুখী করতে হবে। আল্লাহর রহমতের আলোতে আমাদের জীবন আলোকিত হোক এবং আমাদের কর্মে ইসরা ও মেরাজের শিক্ষা প্রতিফলিত হোক। 

✍️মুফতী মুহাম্মাদ আস‌আদ
আরবি প্রভাষক, দারুন নাজাত সিদ্দীকিয়া কামিল মাদ্রাসা,ডেমরা, ঢাকা