10:13 pm, Sunday, 20 April 2025

প্রাইম মেডিকেল কলেজে র‍্যাগিংয়ের নামে শিক্ষার্থীকে নির্যাতন

প্রাইম মেডিকেল কলেজে র‍্যাগিংয়ের নামে শিক্ষার্থীকে নির্যাতন

স্টাফ রিপোর্টার:

প্রাইম মেডিকেল কলেজে র‍্যাগিংয়ের নামে ১৬ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী খালিদ সাইফুল্লাহ তোহাকে নির্মমভাবে নির্যাতনের প্রতিবাদে ও অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রংপুর নগরীর প্রাইম মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। এসময় নির্যাতনকারী শিক্ষার্থীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান আন্দোলনকারীরা।এদিকে নির্যাতিত শিক্ষার্থীর নামে ইভটিজিং মামলা করার হুমকি দিয়ে থানা থেকে অভিযোগ প্রত্যাহারে বাধ্য করার অভিযোগ উঠেছে।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) বেলা ২.৩০ টার সময় প্রাইম মেডিকেল কলেজের ১৬ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী খালিদ সাইফুল্লাহ তোহাকে প্রাইম মেডিকেল কলেজ রংপুর ক্যাম্পাস থেকে ১৩ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আফিফ সুকৌশলে ক্যাম্পাস থেকে কলেজ হোস্টেল সংলগ্ন খোলা মাঠে নিয়ে  গিয়ে তেরতম ব্যাচের রিয়াদ ও আব্দুল আলিমের  নেতৃত্বে সাজিদ, আলিম, আকাশ, ইমরান সহ শিক্ষার্থী তোহাকে বেধড়ক মারপিট করে। তোহার হাতের আঙ্গুল তার মুখের ভিতর ঢুকিয়ে দিয়ে বাশের লাঠিসোটা দিয়ে দীর্ঘ দুই ঘন্টা ব্যাপী নির্যাতনের পর শিক্ষার্থী তোহা মুঠোফোনে ছাত্র প্রতিনিধি নিয়ামুল হাসানকে হৃদয়কে জানালে আনসারের সহযোগিতায় কলেজের প্রফেসর শরিফুল হক (অর্থোপেডিক বিভাগ) কয়েকজন আনসারকে নিয়ে তোহাকে  উদ্ধার করে  প্রাইম মেডিকেল কলেজের এমার্জেন্সি বিভাগে ভর্তি করা হয়।তোহাকে নির্যাতনের ঘটনা ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে ১৬ তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা নির্যাতনকারীদের শাস্তির দাবিতে ক্লাস পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেয়। এবিষয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বাদী হয়ে প্রাইম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ও রংপুর মেট্রোপলিটনের কোতয়ালী থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে।

এদিকে থানায় অভিযোগ দায়েরের পর ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে পাল্টা ইভটিজিং মামলায় ফাঁসিয়ে দিয়ে থানা থেকে অভিযোগ প্রত্যাহার করতে বাধ্য করার অভিযোগ উঠেছে।

এবিষয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী খালিদ সাইফুল্লাহ তোহা জানান,আমার সহপাঠী মোছাঃ মালিহা আরশির সঙ্গে ১৩ তম ব্যাচের সিনিয়র ভাই আব্দুল্লাহ আফিফ এর প্রেমের সম্পর্কের জেরে আরশি প্রায় সময় আমাদের ক্লাসমেটদের প্রেমিকের ভয় দেখাতো। এটা নিয়ে ডিপার্টমেন্টের মেসেনজার গ্রুপে আমি রাগ করে আরশির মেসেজের উত্তরে বলেছিলাম আফিফের টাইম নাই আমাদের কাছে।এটা নিয়েই আমাকে ক্যাম্পাস থেকে নিয়ে গিয়ে বেধড়ক মারপিট করে তেরতম ব্যাচের আব্দুল্লাহ আফিফসহ ৫ জন। এখন ওরাই আমার নামে ইভটিজিং মামলা করতে চাচ্ছে। ইভটিজিং মামলা করতে তো সাক্ষী প্রমাণ কিছু লাগে নাহ। স্যারেরা বললো তদন্ত করে শাস্তি দিবে। তাই অভিযোগ প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

মারপিট করার কথা স্বীকার করে অভিযুক্ত আব্দুল্লাহ আফিফ জানান, একটা মেয়েকে নিয়ে আজেবাজে কথা বলে আমার সম্মানহানি করছে তাই সিনিয়র হিসেবে নিয়ে গিয়ে শাসন করেছি। আমার তো ওর নামে মামলা করা উচিত ছিলো। সেটা না করে শাসন করেছি।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষার্থী জানান, রাজনীতি নিষিদ্ধ ক্যাম্পাসে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা ছাত্রদলের কমিটি দেয়ার জন্য অনেকদিন ধরে চেষ্টা করে যাচ্ছে। ১৩ তম ব্যাচের এই শিক্ষার্থীরা এক বছর আগে কলেজ ক্যাম্পাস গেটের সামনের রিয়া হোটেলে খাবার খেয়ে বিল না দেওয়াকে কেন্দ্র করে হামলা ও ভাংচুর করে ক্যাশ লুট করেছিলো। সেসময় কলেজ প্রশাসন ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো তাদের প্রটেকশন দেয়। এঘটনায় একটি মামলা দায়ের হয়েছিলো। এভাবেই প্রতিনিয়ত প্রতিষ্ঠানের সুনাম ক্ষুন্নের অজুহাতে তাদের অপরাধকে প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে কলেজ প্রশাসন। এবারো তদন্ত কমিটির নামে সময়ক্ষেপণ করে শিক্ষার্থীদের হুমকি ধামকি দিয়ে আন্দোলন থামিয়ে দিয়ে অপরাধীদের মাফ করে দেয়া হবে।

এবিষয়ে প্রাইম মেডিকেল কলেজের পরিচালক ডাঃ শরিফুল ইসলাম জানান, ভুক্তভোগী ও বিবাদী দুইজনেই আমাদের ছাত্র। তারা আমাদের সন্তানের মতো। বিবাদীর নামে মামলা হলে তারাও ইভটিজিং মামলা করতে চেয়েছিলো।এখন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী তোহা থানা থেকে অভিযোগ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা এবিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

প্রাইম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. নূর ইসলাম জানান,গত ১১ ফেব্রুয়ারি ষোলতম ব্যাচের শিক্ষার্থী খালিদ সাইফুল্লাহ তোহাকে ক্যাম্পাসের বাহিরে নিয়ে গিয়ে  কতিপয় শিক্ষার্থী মারধর করে গুরুতর জখম করে।এবিষয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী তোহার লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ঘটনায় জড়িত ছাত্র ছাত্রীদের অভিভাবকগণকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে এবং তদন্তাধীন সময়ে তাদের ক্যাম্পাসে উপস্থিতি বিরত থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।এই ঘটনার বিষয়ে থানায় একটি জিডি করা হয়েছে। আমাদের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তীতে এবিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Popular Post

ফ্রিজ ধরে খোলার সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে হয়ে দুইবোনের-মৃত্যু

প্রাইম মেডিকেল কলেজে র‍্যাগিংয়ের নামে শিক্ষার্থীকে নির্যাতন

Update Time : 11:30:25 am, Friday, 14 February 2025

প্রাইম মেডিকেল কলেজে র‍্যাগিংয়ের নামে শিক্ষার্থীকে নির্যাতন

স্টাফ রিপোর্টার:

প্রাইম মেডিকেল কলেজে র‍্যাগিংয়ের নামে ১৬ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী খালিদ সাইফুল্লাহ তোহাকে নির্মমভাবে নির্যাতনের প্রতিবাদে ও অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রংপুর নগরীর প্রাইম মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। এসময় নির্যাতনকারী শিক্ষার্থীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান আন্দোলনকারীরা।এদিকে নির্যাতিত শিক্ষার্থীর নামে ইভটিজিং মামলা করার হুমকি দিয়ে থানা থেকে অভিযোগ প্রত্যাহারে বাধ্য করার অভিযোগ উঠেছে।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) বেলা ২.৩০ টার সময় প্রাইম মেডিকেল কলেজের ১৬ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী খালিদ সাইফুল্লাহ তোহাকে প্রাইম মেডিকেল কলেজ রংপুর ক্যাম্পাস থেকে ১৩ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আফিফ সুকৌশলে ক্যাম্পাস থেকে কলেজ হোস্টেল সংলগ্ন খোলা মাঠে নিয়ে  গিয়ে তেরতম ব্যাচের রিয়াদ ও আব্দুল আলিমের  নেতৃত্বে সাজিদ, আলিম, আকাশ, ইমরান সহ শিক্ষার্থী তোহাকে বেধড়ক মারপিট করে। তোহার হাতের আঙ্গুল তার মুখের ভিতর ঢুকিয়ে দিয়ে বাশের লাঠিসোটা দিয়ে দীর্ঘ দুই ঘন্টা ব্যাপী নির্যাতনের পর শিক্ষার্থী তোহা মুঠোফোনে ছাত্র প্রতিনিধি নিয়ামুল হাসানকে হৃদয়কে জানালে আনসারের সহযোগিতায় কলেজের প্রফেসর শরিফুল হক (অর্থোপেডিক বিভাগ) কয়েকজন আনসারকে নিয়ে তোহাকে  উদ্ধার করে  প্রাইম মেডিকেল কলেজের এমার্জেন্সি বিভাগে ভর্তি করা হয়।তোহাকে নির্যাতনের ঘটনা ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে ১৬ তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা নির্যাতনকারীদের শাস্তির দাবিতে ক্লাস পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেয়। এবিষয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বাদী হয়ে প্রাইম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ও রংপুর মেট্রোপলিটনের কোতয়ালী থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে।

এদিকে থানায় অভিযোগ দায়েরের পর ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে পাল্টা ইভটিজিং মামলায় ফাঁসিয়ে দিয়ে থানা থেকে অভিযোগ প্রত্যাহার করতে বাধ্য করার অভিযোগ উঠেছে।

এবিষয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী খালিদ সাইফুল্লাহ তোহা জানান,আমার সহপাঠী মোছাঃ মালিহা আরশির সঙ্গে ১৩ তম ব্যাচের সিনিয়র ভাই আব্দুল্লাহ আফিফ এর প্রেমের সম্পর্কের জেরে আরশি প্রায় সময় আমাদের ক্লাসমেটদের প্রেমিকের ভয় দেখাতো। এটা নিয়ে ডিপার্টমেন্টের মেসেনজার গ্রুপে আমি রাগ করে আরশির মেসেজের উত্তরে বলেছিলাম আফিফের টাইম নাই আমাদের কাছে।এটা নিয়েই আমাকে ক্যাম্পাস থেকে নিয়ে গিয়ে বেধড়ক মারপিট করে তেরতম ব্যাচের আব্দুল্লাহ আফিফসহ ৫ জন। এখন ওরাই আমার নামে ইভটিজিং মামলা করতে চাচ্ছে। ইভটিজিং মামলা করতে তো সাক্ষী প্রমাণ কিছু লাগে নাহ। স্যারেরা বললো তদন্ত করে শাস্তি দিবে। তাই অভিযোগ প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

মারপিট করার কথা স্বীকার করে অভিযুক্ত আব্দুল্লাহ আফিফ জানান, একটা মেয়েকে নিয়ে আজেবাজে কথা বলে আমার সম্মানহানি করছে তাই সিনিয়র হিসেবে নিয়ে গিয়ে শাসন করেছি। আমার তো ওর নামে মামলা করা উচিত ছিলো। সেটা না করে শাসন করেছি।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষার্থী জানান, রাজনীতি নিষিদ্ধ ক্যাম্পাসে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা ছাত্রদলের কমিটি দেয়ার জন্য অনেকদিন ধরে চেষ্টা করে যাচ্ছে। ১৩ তম ব্যাচের এই শিক্ষার্থীরা এক বছর আগে কলেজ ক্যাম্পাস গেটের সামনের রিয়া হোটেলে খাবার খেয়ে বিল না দেওয়াকে কেন্দ্র করে হামলা ও ভাংচুর করে ক্যাশ লুট করেছিলো। সেসময় কলেজ প্রশাসন ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো তাদের প্রটেকশন দেয়। এঘটনায় একটি মামলা দায়ের হয়েছিলো। এভাবেই প্রতিনিয়ত প্রতিষ্ঠানের সুনাম ক্ষুন্নের অজুহাতে তাদের অপরাধকে প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে কলেজ প্রশাসন। এবারো তদন্ত কমিটির নামে সময়ক্ষেপণ করে শিক্ষার্থীদের হুমকি ধামকি দিয়ে আন্দোলন থামিয়ে দিয়ে অপরাধীদের মাফ করে দেয়া হবে।

এবিষয়ে প্রাইম মেডিকেল কলেজের পরিচালক ডাঃ শরিফুল ইসলাম জানান, ভুক্তভোগী ও বিবাদী দুইজনেই আমাদের ছাত্র। তারা আমাদের সন্তানের মতো। বিবাদীর নামে মামলা হলে তারাও ইভটিজিং মামলা করতে চেয়েছিলো।এখন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী তোহা থানা থেকে অভিযোগ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা এবিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

প্রাইম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. নূর ইসলাম জানান,গত ১১ ফেব্রুয়ারি ষোলতম ব্যাচের শিক্ষার্থী খালিদ সাইফুল্লাহ তোহাকে ক্যাম্পাসের বাহিরে নিয়ে গিয়ে  কতিপয় শিক্ষার্থী মারধর করে গুরুতর জখম করে।এবিষয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী তোহার লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ঘটনায় জড়িত ছাত্র ছাত্রীদের অভিভাবকগণকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে এবং তদন্তাধীন সময়ে তাদের ক্যাম্পাসে উপস্থিতি বিরত থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।এই ঘটনার বিষয়ে থানায় একটি জিডি করা হয়েছে। আমাদের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তীতে এবিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।