
আর্ন্তজাতিক মাতৃ ভাষা দিবসে শহীদদের স্মরণে শ্রদ্ধানজ্ঞলী অর্পণ
মোঃ নাজমুস ছাকিব,রংপুর জেলা প্রতিনিধি
আজ ২১শে ফেব্রুয়ারি, বাঙালি জাতির ইতিহাসের গৌরবময় একটি দিন—মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। ১৯৫২ সালের এই দিনে মাতৃভাষার অধিকার আদায়ের আন্দোলনে রফিক, সালাম, বরকত, জব্বারসহ নাম না জানা অনেক ভাষা সৈনিক বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দেন। তাঁদের সেই আত্মত্যাগ আজ শুধু বাংলাদেশের নয়, সারা বিশ্বের জন্য এক অনন্য দৃষ্টান্ত।
রাত ১২টা ১ মিনিটে রংপুর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে জেলা প্রশাসন, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও সাধারণ মানুষ ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
শহীদ মিনারে ফুল হাতে উপস্থিত ছিলেন নানা বয়সী মানুষ। শিক্ষার্থীরা সাদা-কালো পোশাকে “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি” গান গেয়ে ভাষা শহীদদের স্মরণ করেন।
এছাড়া, রংপুরের বিভিন্ন উপজেলা শহীদ মিনারেও শ্রদ্ধা নিবেদনের আয়োজন করা হয়। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক সংগঠন প্রভাতফেরি বের করে, যেখানে অংশগ্রহণকারীদের কণ্ঠে উচ্চারিত হয়— “বাংলার ভাষা চাই, চাই মাতৃভাষার অধিকার!”
শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে রংপুরে নানা কর্মসূচি পালিত হচ্ছে।
সকালেই জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে একটি বর্ণাঢ্য র্যালি বের হয়, যা শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো আলোচনা সভা, কবিতা আবৃত্তি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।
১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো ২১শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে, যা ২০০০ সাল থেকে সারা বিশ্বে পালিত হচ্ছে। এ উপলক্ষে রংপুরে অবস্থিত বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক সংগঠন ভাষার গুরুত্ব নিয়ে সেমিনার ও আলোচনা সভার আয়োজন করেছে।
বিশ্বব্যাপী প্রবাসী বাঙালিরাও দিনটি যথাযথ মর্যাদায় পালন করছে। বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি কমিউনিটি শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় এবং ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করে।
এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য— “বহুভাষার সমৃদ্ধি, শিক্ষার নিশ্চিত গতি”, যা মাতৃভাষার গুরুত্বকে নতুন মাত্রা দিয়েছে।
রংপুরের বিভিন্ন বক্তারা তাদের বক্তব্যে বলেন, ২১শে ফেব্রুয়ারি শুধু স্মরণের দিন নয়, মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার শপথ নেওয়ার দিন। বাংলা ভাষার সঠিক চর্চা ও সংরক্ষণে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানানো হয়।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বাংলা ভাষার শুদ্ধ উচ্চারণ ও ব্যবহার নিশ্চিত করতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বাংলা ভাষার গুরুত্ব আরও বেশি তুলে ধরা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।
ভাষা শহীদদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে পাওয়া এই বাংলা ভাষা আমাদের অস্তিত্বের অংশ। নতুন প্রজন্মকে মাতৃভাষার প্রতি শ্রদ্ধাশীল করে তুলতে হবে, যেন তারা কখনো নিজেদের ভাষা ও সংস্কৃতিকে ভুলে না যায়।
রংপুরসহ সারাদেশে দিনটি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে পালিত হয়েছে, আর শহীদদের আত্মত্যাগ চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে বাঙালির হৃদয়ে।