
দু’বিশ্ববিদ্যালয়ে তুচ্ছ ঘটনায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে-বোমা -আগুন , আহত শতাধিক
নিজস্ব সংবাদদাতা দেওয়ান বৃষ্টি চৌধুরী
সাভারে অবস্থিত বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভয়াবহ রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। টানা নয় ঘণ্টা ধরে চলা এ সংঘর্ষে উভয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। সংঘর্ষ চলাকালে সিটি ইউনিভার্সিটিতে ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চার দিনের ছুটি ঘোষণা করেছে।
রোববার সন্ধ্যা থেকে শুরু হওয়া এই সংঘর্ষ সোমবার সকাল পর্যন্ত চলতে থাকে। এতে সকাল ৬টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত মিরপুর–বিরুলিয়া, খাগান ও আশুলিয়া সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকে। দীর্ঘ সময় সড়ক অবরোধের কারণে পুরো এলাকায় তীব্র যানজট ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রোববার সন্ধ্যায় খাগান এলাকার ব্যাচেলর প্যারাডাইস ভবনের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির এক শিক্ষার্থীর গায়ে সিটি ইউনিভার্সিটির এক শিক্ষার্থীর থুথু পড়লে তুচ্ছ বিষয়টি কেন্দ্র করে দুজনের মধ্যে বাগবিতণ্ডা হয়। স্থানীয়দের হস্তক্ষেপে তাৎক্ষণিকভাবে পরিস্থিতি শান্ত হলেও পরবর্তীতে উভয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
রাত ১২টার দিকে ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির কয়েক শতাধিক শিক্ষার্থী দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সিটি ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে হামলা চালায়। এ সময় সিটি ইউনিভার্সিটির ভিসি অফিস, রেজিস্ট্রার অফিস, প্রো-ভিসি অফিস, কনফারেন্স রুম, কম্পিউটার ল্যাব, অ্যাকাউন্টস অফিসসহ বিভিন্ন স্থাপনায় ভাঙচুর চালানো হয়। এছাড়া ক্যাম্পাসে থাকা প্রায় ১০টি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, হামলার সময় ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটে।
সংঘর্ষে শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। এর মধ্যে অন্তত ৩০ থেকে ৩৫ জনকে সাভার ও রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহতদের মধ্যে ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির ১১ জন শিক্ষার্থীকে পরে গুরুতর অবস্থায় সিটি ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে নিজ প্রতিষ্ঠানে ফেরত পাঠানো হয়।
এ ঘটনার পর সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা সকাল থেকে ক্যাম্পাস ত্যাগ করতে শুরু করে। দুপুরের দিকে কর্তৃপক্ষ চার দিনের ছুটি ঘোষণা করে।
উপাচার্য লুৎফর রহমান বলেন, ‘পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আমরা সাময়িকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রেখেছি। আশা করছি ছুটি শেষে ক্লাস স্বাভাবিকভাবে শুরু হবে।’
অন্যদিকে, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির মুখপাত্র সৈয়দ মিজানুর রহমান রাজু বলেন, ‘আমরা বিষয়টি শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানের চেষ্টা করছি। প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে।’
সংঘর্ষের সময় দীর্ঘ নয় ঘণ্টা সড়ক অবরোধ থাকায় মিরপুর–বিরুলিয়া ও আশুলিয়া–খাগান সড়কে যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। পরে বিকেল ৩টার দিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
এদিকে, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) অতিরিক্ত পরিচালক সুলতান মাহমুদ দুপুরে দুটি বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শন করেন। তিনি সিটি ইউনিভার্সিটির পুড়ে যাওয়া গাড়ি, অফিস ও ল্যাবসমূহ ঘুরে দেখেন এবং পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রতিবেদন তৈরির নির্দেশ দেন।
সাভার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জুয়েল মিয়া জানান, বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। সংঘর্ষে জড়িতদের শনাক্তে কাজ চলছে। উভয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনই থানায় মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে।
দেওয়ান বৃষ্টি চৌধুরী 





















